২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

শ্রমিক সুরক্ষায় প্রয়োজন সামাজিক বীমা

শ্রমিক সুরক্ষায় প্রয়োজন সামাজিক বীমা -

বর্তমানে বাংলাদেশকে দেখা হয় বিশ্বের পোশাক সরবরাহকারী হিসেবে। ২০১৭ সালে যার রফতানি পরিমাণ ছিল ২৮ বিলিয়ন ডলার এবং এই মোতাবেক দেশটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানিকারক এবং বৈশ্বিক গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে অন্যতম বড় সরবরাহকারী। প্রায় সাড়ে চার হাজার কারখানায় বর্তমানে আনুমানিক চার মিলিয়ন লোক নিয়োজিত আছে।

বিষয়টি বিশ্বব্যাপী দৃষ্টি আকর্ষণ করায় সাম্প্রতিক সময়ে এই ইন্ডাস্ট্রিতে শ্রমিকদের অধিকার এবং মানবাধিকার সম্পর্কিত বেশ কিছু বিষয়ে বেশ ভালো উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। যদিও এখনো এই খাতে আরো অনেক উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে। বড় বড় শিল্প দুর্ঘটনাগুলো; যেমন ২০১২ (২৪ নভেম্বর ২০১২, তাজরিন ফ্যাশন এর অগ্নিকাণ্ড) এবং ২০১৩ (২৪শে এপ্রিল ২০১৩, রানাপ্লাজা ধস) ঘটনা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে যে কর্মক্ষেত্রের দুর্ঘটনা বা পেশাগত রোগের ঝুঁকি থেকে শ্রমিক পুরোপুরি সুরক্ষিত নয়।

এমনকি রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ৭ বছর পার হওয়ার পর এখনো বাংলাদেশ সর্বাঙ্গীণ ইমপ্লোয়মেন্ট ইনজুরি ইনস্যুরেন্সের দিক থেকে পিছিয়ে আছে। ফলে বাংলাদেশের শ্রমিকরা বৈশ্বিকভাবে অনুমোদিত আইএলও কনভেনশন ১২১-এর ইমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি ইনস্যুরেন্স (ই আই আই) এর সুবিধাগুলো পাচ্ছে না যা তাদের প্রাপ্য।

এমনকি শীর্ষ ২০ তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যার ইআইআই এবং কোনো প্রকার সামাজিক বিমার সুবিধা নেই।

বাংলাদেশ সরকার এই বিষয়ে অবগত এবং শ্রমজীবী শ্রেণীর জন্য একটি কর্মসংস্থান ক্ষতি রক্ষা প্রকল্প চালু করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে যার সার্বিক পদক্ষেপের আওতায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত থেকে শুরু করে প্রতিরোধ, পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ খাত অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তবে, আইনি কাঠামো, প্রশাসনিক কাঠামোর পাশাপাশি একটি বিধিবদ্ধ কর্মসংস্থান ক্ষতি সুরক্ষা প্রকল্পের রোল আউটয়ের জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া এখনো কার্যকর হয়নি।

জিআইজেড এবং আইএলও দেশে কর্মসংস্থান ইনজুরি বীমা (ইআইআই) প্রকল্পের উন্নয়নে বাংলাদেশের সরকার এবং সামাজিক অংশীদারদের একত্রে কাজ করার জন্য সহযোগিতা করে আসছে। অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি জি আই জেড এই প্রজেক্টের মাধ্যমে বাংলাদেশে ই আই আই স্কিম পরিচিত করার লক্ষে বিভিন্ন অংশীদারের সাথে কথোপকথনের মাধ্যমে সামাজিক ঐক্যমত গঠনে কাজ করে যাচ্ছে।

এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সরকার, নিয়োগকর্তা এবং শ্রমিক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ত্রিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ইআইআই সম্পর্কিত সচেতনতা এবং জ্ঞান বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। যেখানে উচ্চ-স্তরের স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের বেশ কয়েকটি EII প্রস্তাবের সংস্পর্শে এসেছে, কিন্তু এখনো শ্রমিক, যারা কিনা EII প্রকল্পের সুযোগ সুবিধাভোগী তাদের মধ্যে এবং সামগ্রিকভাবে সমাজের মধ্যে এ বিষয়ে জ্ঞান এবং বোঝার অভাব রয়েছে।

সোশ্যাল প্রটেকশন বা সামাজিক সুরক্ষা হলো একটি মানবাধিকার যা জীবনচক্রের দারিদ্র্যতা দূরীকরণ ও রোধ, সামাজিক দুর্বলতা এবং অবজ্ঞা ঠেকাতে বিভিন্ন নীতিমালা এবং প্রোগ্রামের সেট হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।

সামাজিক সুরক্ষার আওতায় যেসকল ক্ষেত্রে সুবিধা পাওয়া যায় তা হলো শিশু এবং পরিবার , মাতৃত্ব, বেকারত্ব, কর্মসংস্থান দুর্ঘটনা, অসুস্থতা, বার্ধক্য, অক্ষমতা, বেঁচে থাকা এবং স্বাস্থ সুরক্ষা। সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলো অবদানমূলক স্কিমগুলোর মিশ্রণ দ্বারা এই সমস্ত নীতি ক্ষেত্রগুলোকে সম্বোধন করে।

সামাজিক বীমা একটি প্রতিরোধমূলক ধারণা, যেখানে সরকার দুর্বল ব্যক্তিদের জীবনযাত্রার মান নিশ্চিত করার জন্য হস্তক্ষেপ করে। একটি সামাজিক বীমা প্রোগ্রাম সাধারণত অবদানমূলক। সাধারণত কর্মক্ষেত্রের দুর্ঘটনা, স্বাস্থ্য, বেকারত্ব এবং পেনশন সামাজিক বীমা প্রকল্পগুলো অন্তর্ভুক্ত।


আরো সংবাদ



premium cement